কলিমুদ্দির বাসর [পর্ব-২]
- মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
- ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। কলিমের চাচাতো ভাইয়ের তিন বউ কলিমদের বাড়ি এলো, কলিমের বউ দেখতে। বড় ভাবী কলিমকে বলল, ‘দেখ দেবর, তুমি আজ বাড়ির বাইরে যাবা না।’
কলিম কৌতূহল ভরা নয়নে জিজ্ঞাস করল, ‘ক্যান?’
বড় ভাবী জবাব দেয়, ‘তোমার আজ বাসররাত। বাড়ির বাইর গেলে জিন-ভূতে আছর করতে পারে।’
বড় ভাবী কলিমের কানে কানে কি যেন বলল। কলিম জবাবে একটা ঝাড়ি দিলো, ‘দূর, এটা কোনো ব্যাপার হলো।’
বড় ভাবী বলল, ‘ওরে আমার সোনার চান পিতলা ঘুঘু, মনে হচ্ছে এর আগে আরো কয়েকখান বিয়ে করে সব অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছ।’
কলিম বিজ্ঞের মতো উত্তর দেয়, ‘এটা হলো ডিজিটাল যুগ। বুঝলে?’
সন্ধ্যার আগেই শুরু হলো বাসর প্রস্তুতি। কলিম কেজিখানেক মুড়ি আনল। মেজো ভাবীকে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ভাবী মুড়িগুলো বেশি করে পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, তেল দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে রাখবে।’
মেজো ভাবী সন্ধ্যার সময় মুড়ি মাখানোর কারণ জানতে চাইল। কলিম বলল, ‘ও মা, সে কি কথা! নতুন বউয়ের সাথে সারা রাত গল্প হবে না? গল্পের ফাঁকে নতুন বউ যদি কিছু খেতে চায়?’
কিছুক্ষণ পর কলিমকে দেখা গেল টকটকে লাল একখান প্যান্ট পরে ঘুরঘুর করতে। এই দৃশ্য দেখে ছোট বউ দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞাস করল, ‘কিরে কলিম, কতক্ষণ পরে তুই বাসরঘরে যাবি। লুঙ্গি পাল্টিয়ে প্যান্ট পরলি ক্যান?’
কলিম সহাস্যে জবাব দিলো, ‘তোমরা আমাকে বোকা পেয়েছ নাকি? নতুন বউ মানে নতুন মেহমান। এইটা তো নিশ্চয় জান, নাকি?’
ছোট বউ বলল, তো কি হয়েছে?’
কলিম বলে চলল, ‘তোমরা হয়তো জান না, লুঙ্গি পরে শুইলে লুঙ্গি আমার গলার টাই হয়ে যায়। নতুন বউ এ অবস্থায় আমাকে দেখলে লজ্জায় আমার মাথা হেড হয়ে যাবে না?’
তিন ভাবী একত্রে বউ দেখার জন্য ঘরে ঢুকল। নতুন বউ তাদের দেখা মাত্র দেড় হাত লম্বা ঘোমটা টেনে খাটের এককোণে বসল। বড় ভাবী বলল, ‘ওগো নতুন বউ, তুমি এত বড় ঘোমটা দিয়ে বসে থাকলে আমরা তোমার চাঁদ মুখখান দেখব কী করে?’
নতুন বউ কোকিল স্বরে বলল, ‘শোনেন ভাবী সকল, আমার বাবা, চাচা, দাদা এককথায় চৌদ্দগোষ্ঠীর সবাই খুবই পরহেজগার। আমাদের বংশের মেয়েরা পরপুরুষে মুখ দেখাই না।’
তিন ভাবী একযোগে বলল, ‘কিন্তু আমরা তো পুরুষ না, মহিলা। আমাদের কণ্ঠ কি পুরুষের মতো মনে হয়?’
নতুন বউ বলল, ‘আমাকে মাফ করবেন। আমি খুব লাজুক তো। আরেক দিন আইসেন তখন মুখ দেখাব, সাথে চুলও।’
সন্ধ্যার পর কলিম গেল টয়লেটে। কিন্তু বের হওয়ার সময় দরজার সিটকিনি আর খুলছে না। কিছুতেই খুলছে না। কলিম ডানে-বামে টানছে, ওপরে-নিচে মোচড়াচ্ছেÑ না, সিটকিনি খুলছেই না। দাঁতে দাঁত লাগিয়ে ভেংচি মেরে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে টানছে তাও কাজ হচ্ছে না।
কলিম এদিক সেদিক তাকায়, চোখ ঘনঘন মিটমিটায়। কোনো বুদ্ধি পায় না। কলিম গোঙাতে লাগল। কারো কোনো সাড়া না পেয়ে সে দরজার ওপর দিয়ে উঁকি মেরে নতুন বউকে ডাকছে, ‘ওরে আমার ময়না, এদিক একটু আয় না। টয়লেটের দরজা তো খোলে না।’
কলিমের বউ ঘর থেকে বের হয়ে এদিক-সেদিক তাকিয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করছে কলিমের গোঙানির শব্দ কোন দিক থেকে আসছে। অবশেষে সে আবিষ্কার করল কলিম টয়লেটের ভেতর। নতুন বউ জিজ্ঞেস করল ‘কলিম, তোমার কি হয়েছে? দরজা খোলার চেষ্টা করো।’
কলিম কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল ‘কিছুতেই তো কাজ হচ্ছে না।’
নিরুপায় হয়ে নতুন বউ শাশুড়ির দরজায় টোকা দিয়ে চেঁচামেচি শুরু করল ‘শাশুড়ি আম্মা, আপনার ছেলেকে বাঁচান। আপনার ছেলে টয়লেটে আটকা পড়েছে।’ ॥
(এরপর শেষ পর্ব)